শসা আমাদের সবার প্রিয় একটি শীতকালীন সবজি। অন্যান্য যেকোনো সবজি থেকে শসা চাষ করা খুবই সহজ। আর অন্য যেকোনো সবজি থেকে শসা খুব দ্রুত ফলন দেয়। আচ্ছা ফলনের বিষয়ে না হয় একটু পরেই যাওয়া যাক। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক শসার বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে।শসার বৈজ্ঞানিক হচ্ছে Cucumis sativus।
এটি Cucurbitaceae ফ্যামিলির অন্তর্ভূক্ত। শসার পুষ্টিগুণও কিন্তু বেশ। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফাইবার। প্রতি ১০০ গ্রাম শসাতে প্রায় ১৬ ক্যালোরি রয়েছে।তা মানে হচ্ছে যারা ওজন কমাতে চান তাদের খাবার তালিকায় ‘শসা’ কে রাখতেই পারেন। আচ্ছা এবার আসি, ছাদে আমরা কিভাবে শসা চাষ করবো সেই আলোচনায়।
ছাদে শীতকালীন শসা চাষের জন্য সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বীজ বপণ করা যায়।প্রথমেই ভালো কোনো কোম্পাণীর শসার বীজ কিনে নিবেন। শসা কে দুইভাবে ভাগ করতেই পারেন। কেজি শসা আর ছোট শসা(অর্থাৎ যেগুলো ২৫০ গ্রামের আশেপাশে হয়) আপনি ছাদে যে শসা চাষ করবেন, সেই জাতের বীজ নিবেন। বীজ হাতে পাওয়ার পর, প্যাকেট থেকে বীজ গুলো বের করে নিবেন।এরপর বীজগুলোকে দুই ঘন্টার জন্য রোদে শুকিয়ে নিবেন।এরপর বীজ রোদ থেকে এনে দুই ঘন্টার জন্য ছায়ায় রাখবেন। বীজ ঠান্ডা হওয়ার পর, একটি পাত্রে পানি নিয়ে বীজ গুলোকে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টার জন্য পানিতে ভিজিয়ে দিবেন। বীজ ভিজানো শেষ হলে সীড ট্রে এর মধ্যে বীজগুলো বপণ করে দিবেন।শসার বীজ থেকে চারা বের হতে ৩-৫ দিন সময় লাগে। চারার বয়স ৭-১০ দিন হলে, তা সীড ট্রে থেকে নিয়ে মুল জায়গায়/ টবে রোপণ করে দিবেন।
শসা চাষের জন্য মাটি প্রস্তুতি
কম্পোস্ট:- ৩০%
মাটি:- ৩০%
নিম খৈল:- ১০%
বালু:- ১০%
কোকোডাস্ট:- ১০%
জিপসাম+ম্যাগসার+ কুইকপটাশ:- ১০%
মাটিতে শসার চারা লাগানোর পর কিছু টেকনিক অবলম্বণ করলে কিন্তু শসাতে স্ত্রীফুল আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর যত বেশী স্ত্রী ফুল ততো বেশী শসা।
>>টবে চারা লাগানোর ৭ দিনের মাথায়
লিটোসেন:- ০.৫ মিলি/১ লি
প্রমোটার প্লাস:- ৩ ফোটা/১লি হারে স্প্রে করে দিবেন।
>>প্রথম স্প্রের ১৫ দিন পরে আবার,
লিটোসেন:- ১ মিলি/১ লি
প্রমোটার প্লাস:- ৩ ফোটা/১লি হারে স্প্রে করে দিবেন।
এতে গাছে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।শসা গাছে পুুরুষ ফুল এবং স্ত্রীফুল আলাদা আলাদা ফোটে। গাছের বয়স যখন ২৫-৩৫ দিন হয় তখন আস্তে আস্তে পুরুষ ফুল ফোটা শুরু হয়
এরপর আস্তে আস্তে স্ত্রীফুল ফোটে।
(স্ত্রী এবং পুরুষ ফুল চেনার সহজ একটা উপায় আছে। যদি দেখেন ফুলের পেছনে ছোট একটা শসা আছে। তাহলে বুঝবেন এটা স্ত্রী ফুল। আর যদি ছোট শসা না দেখেন তবে বুঝবেন এটা পুরুষ ফুল।)
শসা ফুলের পরাগায়ন:
পুরুষ এবং স্ত্রী ফুলের যখন পরাগায়ন হবে, তখন স্ত্রী ফুলের শসাটি বড় হওয়া শুরু করবে। শসার ফুল সাধারণত সকালবেলা ফোটে। তাই আপনি চাইলে গাছ থেকে পুরুষ ফুল ছিঁড়ে স্ত্রী ফুলে লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে করে ফল সেট হওয়া নিশ্চিত হবে। আর এমনিতেও বাতাস, মৌমাছি কিংবা অন্য কোনো কীটপতঙ্গ দ্বারা তো পরাগায়ন হয় ঠিকই, তবে হাত পরাগায়ন করলে ফল সেট হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ হয় আর কি। তবে একটু সাবধানে পরাগায়ন টা করবেন। এই তো!
★★ শসার প্রথম যে লতাটা থাকে তাকে First stem / ফার্স্ট জেনারেশন বলে। এখন শসার এই ফার্স্ট জেনারেশন থেকে বলতে গেলে সবগুলোই পুরুষ ফুল আসে। তার মানে এই first stem থেকে কোনো স্ত্রীফুল খুব একটা আসে না। এখন শসার জন্য তো আপনার স্ত্রী ফুল লাগবে তাই না। তো সেক্ষেত্রে আপনি একটা কাজ করতে পারেন। এই ধরেন গাছের প্রথম শাখা যখন ১২-১৪ পাতা পর্যন্ত হবে তখন এর অগ্রভাগ টা একটা ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে দিবেন। দেখবেন ৭-১০ দিনের মধ্যে গাছের প্রতিটা পাতার বোঁটার দিক থেকে নতুন নতুন শাখা বের হচ্ছে। ঐ শাখাগুলোকে বলা হবে 2nd stem / ২য় জেনারেশন। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,তা হচ্ছে এই শাখাগুলো থেকে যে ফুল বের হবে সেগুলার ৪০% স্ত্রীফুল হয়ে থাকে। আর বাকিগুলো পুরুষ ফুল। আর এই প্রথম শাখার প্রথম ৬-৭ পাতা পর্যন্ত যতগুলো শাখা বের হবে সেসব গুলোই ফেলে দিবেন। এরপর ৮-১২/১৪ পাতা পর্যন্ত যতগুলো শাখা বের হবে তার মধ্যে ঋষ্ট-পুষ্ট শাখাগুলো রেখে বাকিগুলো আবার পেলে দিবেন। সবই যদি ফেলে দিই তবে রাখবো টা কি? সেটাই কি ভাবছেন আরে অপেক্ষা করুন বলছি।
এখানের বাকি শাখাগুলোর যখন আবার ছয় পাতা পর্যন্ত বের হবে তখন সেগুলোকে আবার ধারালো চুরি দিয়ে অগ্রভাগ কেটে দিবেন। এরপর এখান থেকে অর্থাৎ ২য় জেনারেশন থেকে যে শাখাগুলো বের হবে সেগুলো সব রেখে দিবেন। আর হ্যাঁ এই শাখাগুলো থেকে যে ফুল গুলো বের হবে সেগুলো থেকে ৮০% ই স্ত্রী ফুল বের হবে। তার মানে প্রচুর শসা তাই তো ভাবছেন? হ্যাঁ প্রচুর শসা। তবে পরাগায়ন হলেই হয়ে যাবে।আর চিন্তা করতে হবে না।
প্রতিসপ্তাহে একবার গাছের গোড়ায় নিমের খৈল ভিজানো পানি দিবেন। গাছের জন্য এটা একেবারে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
>> শসা গাছে রেড পামকিং বিটল পোকা, লেদা পোকা, জাব পোকা বেশী আক্রমণ করে।তো এদের জন্য আপনি নাইট্রো:- ১.৫ মিলি/১ লি হারে স্প্রে করতে পারেন।
>> থ্রিপসের জন্য ইমিটাফ:- ১ মিলি/১ লি হারে স্প্রে করবেন।
>>মাকড়ের জন্য ভার্টিমেক/ওবেরন:- ১ মিলি/১লি স্প্রে করবেন।
>>আর পাতা পঁচা,গোড়া পঁচা, শিকড় পঁচাসহ অন্যান্য ফাঙ্গাস জনিত সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে
ম্যানসার:- ২গ্রাম/১ লি
>>অথবা রিডোমিল্ড গোল্ড:- ২ গ্রাম/১লি
অথবা এমিস্টার টপ :- ১ মিলি/১ লি হারে স্প্রে করে দিবেন।
একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন।গাছে শসা বেশী বড় করতে যাবেন না, ছোট শসার সাইজ যখন ৭-৯ ইঞ্চি হবে তখনই গাছ থেকে পেড়ে নিবেন। এইতো ছাদ থেকে তাজা তাজা শসা পেড়ে পরিবারসহ উপভোগ করুন।